ইমাম খাইর, কক্সবাজার :: কিন্ডারগার্টেন বৃত্তির নামে শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন। সেই সাথে ভেজালরোধ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মোবাইলকোর্ট চালানো হবে বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, কিন্ডারগার্টেন বৃত্তির নামে কিছু সংস্থা বা সংগঠন শিক্ষা বাণিজ্য করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা খুবই দুঃখজনক। শিক্ষা নিয়ে এরকম প্রতারণা বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জড়িতরা রেহাই পাবে না।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ বিষয়ক জনসচেতনতা মূলক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসনের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে সেমিনারে তিনি বলেন, যেসব ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। পেঁয়াজ, লবণসহ সব ভোগ্য পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে। মাছ-মাংস-তরিতরকারীর বাজার তদারকি করা হবে।
অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রয়োজনে মোবাইলকোর্ট চালানো হবে। এ ক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার জন্য ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা, বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকারের যৌথ সেমিনারে বক্তব্য রাখেন -অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ আমিন আল পারভেজ, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, এনডিসি জয়নাল আবেদীন, সহকারি সিভিল সার্জন ডাক্তার মহিউদ্দিন মুহাম্মদ আলমগীর, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার মোহাম্মদ শাহীন আব্দুর রহমান চৌধুরী, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক সৈকতের সম্পাদক মাহবুবর রহমান, কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কক্সবাজার-এর সভাপতি ও দৈনিক রূপালী সৈকতের সম্পাদক ফজলুল কাদের চৌধুরী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শাহজাহান।
উন্মুক্ত আলোচনায় বাজারদর, জনস্বার্থ ও ভোক্তা অধিকার বিষয়ে কথা বলেন – কক্সবাজার সিভিল সোসাইটিজ ফোরামের সহ-সভাপতি আ.ন.ম হেলাল উদ্দিন, অধ্যাপক আনোয়ারুল হক, কক্সবাজার দোকান মালিক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি মোস্তাক আহমদ, মহেশখালী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন, সাবেক পৌর কমিশনার আবু জাফর ছিদ্দিকী, জেলা খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম, গ্যাস ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম, কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন, সাংবাদিক মোঃ নেজাম উদ্দিন, শিক্ষক মোঃ নেছার উদ্দিন।
তারা মাছ-মাংস-তরিতরকারির বাজার নিয়মিত মনিটরিং, পরিমাপক যন্ত্রের যাচাই, প্যাথলজিগুলোতে অগ্রিম স্বাক্ষর করা রিপোর্ট তদারকি করার দাবী জানান। সেইসাথে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্যও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
পর্যটন মৌসুমে আবাসিক হোটেলে চড়া দামে রুম ভাড়া আদায়, খাবারের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি প্রশাসনিক অভিযান চালানোর দাবী তুলেন বক্তারা।
পর্যাপ্ত লবন মজুদ থাকার পরও আমদানি, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে গ্যাস সিলিন্ডারসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসায় স্থানীয় বাজারে প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তারা অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর হস্তে দমনের দাবী জানিয়েছে।
সেমিনারের শুরুতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ বিষয়ে মাল্টিমিডিয়া মিডিয়া প্রেজেন্টেশন করেন ভোক্তা অধিকার কক্সবাজার অফিসের সহকারী পরিচালক এএসএম মাসুম উদ দৌলা।
সেমিনারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, আমিও ভোক্তা। সে হিসাবে বাজারের অবস্থা দেখে দুঃখ অনুভব করি।
বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সেজন্য কিছু কান্না শুনতে চাই। তবে, গরীবের নয়। অসাধু মজুতদার-ব্যবসায়ীদের কান্না শুনতে চাই।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ নয়, দুর্নীতিবাজরাই আমাদের কাঁদাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের গলায় রশি দিয়ে বাজারে টানতে হবে। কেন অনর্থক দাম বাড়াবে? সমাধান চাই।
সিরাজুল মোস্তফা বলেন, আমার দেশের চাষিরা লবণের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। অথচ ভোক্তা পর্যায়ে প্যাকেটজাত লবণের কেজি ৪০ টাকা। এমন তো হবার কথা নয়।
তিনি দুঃখ করে বলেন, শুধু রাজনীতি করি বলে সত্য না বলে পারব না। আমাদের সবাইকে তো মরতে হবে। যারা বাজার নিয়ন্ত্রণে আছে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। উচ্চ পর্যায়ের কর্তারা দায় এড়াতে পারে না।
কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না? আক্ষেপ সিরাজুল মোস্তফার। তিনি বলেন, সবখানে জনগণ প্রতারিত হচ্ছে। আমরা একটু ঈমানদারের ভূমিকা রাখি। প্রতিবাদি হই। সব কিছু নিয়ন্ত্রিত থাকুক, আমরা চাই।
পাঠকের মতামত: